ফেনীর ফুলগাজীতে রবিবার রাতে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে নবজাতককে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এই আগাম প্রসব হওয়া শিশুটি ঠান্ডাজনিত রোগসহ আরো কিছু রোগে ভুগছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র ও ফেনীতে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সহায়” এর সদস্যরা জানান, রবিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফেনী-পরশুরাম সড়কের ধারে, ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় একটি ঝোঁপের পাশ থেকে স্থানীয় লোকজন নবজাতকের কান্নার শব্দ পায়। কাছে গেলে দেখা যায়- একটি বড় পলিথিন প্যাকেটে এক শিশু নবজাতক নড়াচড়া করছে। এসময় উপস্থিত লোকজন মেয়ে নবজাতককে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রাত প্রায় ১০টার দিকে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হলে হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা- আরএমও ডা. আবু তাহের শিশুটিকে গ্রহন করেন এবং এ বিষয়ে সহায়তার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সহায়” এর সদস্যদের সংবাদ পাঠান। রাতে ওই সংগঠনের সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি ও সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় ভিডিও সাংবাদিক দুলাল তালুকদার হাসপাতালে গিয়ে নবজাতকের দায়িত্ব নেন।
আরএমও ডা. আবু তাহের সোমবার দুপুরে ‘কালের কন্ঠ’কে বলেন, এটা আগাম প্রসব হওয়া নবজাতক। সে ঠান্ডাজনিত রোগসহ আরো কিছু রোগে আক্রান্ত। তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। তাই চট্টগ্রামে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমন আগাম নবজাতককে বা ‘প্রি ম্যাচিউর বেবি’কে জরুরী ভিত্তিতে ইনকিউবেটরে দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, প্রথমে শিশুটিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
সোমবার বিকেলে ‘সহায়’ এর সভাপতিসহ কয়েকজন সদস্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে শিশুটিকে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষন বিভাগ-আইসিইউতে ভর্তি করেন। ‘সহায়’ এর সভাপতি জানান, নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন। শিশুটি ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. দীপিকা দে’র তত্বাবধানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সূত্র জানায়, এই নবজাতকের মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। পিতার নাম জানা যায়নি। বাড়ি ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামে। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের রেজিষ্ট্রারে বিস্তারিত ঠিকানা ও ফোন নম্বর নেই। শুধু প্রয়োজনে দেয়া আছে জনৈক কামাল হোসেন। নাম-পরিচয় গোপন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কাছে।
লেবার ওয়ার্ডের জেষ্ঠ্য সেবিকা ফাতেমা আক্তার জানান, প্রসবের উদ্দেশ্যে রুগী ‘ফাতেমা’ রবিবার বিকেলে ভর্তি হয়ে লেবার ওয়ার্ডে আসেন এবং সন্ধ্যা পোনে ৭টায় স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে কন্যা শিশুর জন্ম দেন। কিন্তু তারা রাত সাড়ে আটটার দিকে আবার হাসপাতাল ছেড়ে নবজাতককে নিয়ে চলে যান। স্বজনরাই শিশুটিকে সড়কের পাশে ফেলে গেছেন বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছেন। সোমবার ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে এমন কোন প্রসুতি নারীর সংবাদ পাওয়া যায়নি।
প্রসবের মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করা যায় কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে আরএমও বলেন, যতদুর খবর পেয়েছি তারা শিশুটিকে শহরে নিয়ে ডাক্তার দেখাবেন বলে তাকে নিয়ে চলে যান। লেবার ওয়ার্ডের সেবিকারা জানান, কথিত ফাতেমা প্রসবের মাত্র সোয়া এক ঘন্টা পর তাদের জানান, তিনি সুস্থ ও ভালো আছেন। তাই নবজাতককে নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছেন। এসময় সাথে কে বা কারা ছিলেন তা সেবিকারা লক্ষ্য করেননি। জেষ্ঠ সেবিকা ফাতেমা আক্তার বলেন, লেবার ওয়ার্ডে রুগীর খুব চাপ ছিল। তাই তারা যেহেতু সুস্থ বোধ করেছেন, তাই তাদের হাসপাতাল ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়।
তথ্য সূত্র
আসাদুজ্জামান দারা , ‘কালের কন্ঠ “