ইসমাইল হোসেন শুভঃ এক সময় থানা চত্বরে ঢুকতেই ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে আগমনকারীদের হোঁচট খেতে হতো। থানার চারপাশ ছিল আবর্জনায় ভরা, ঢুকতে গেলে নাক ধরে রাখতে হতো। সেই থানা এখন দেখে চেনাই যায় না। সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে থানার পরিবেশও, চারদিকে নানা ফুলগাছ। পাশাপাশি আরও শোভাবর্ধন বিভিন্ন গাছ ও অবকাঠামোর উন্নয়নে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে ফেনীর পরশুরাম থানা।
অনেকে সৌন্দর্য দেখার জন্যও প্রতিদিন সেখানে হাজির হচ্ছে। পরশুরাম থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, থানার এমন মুগ্ধতা ছড়ানোর নেপথ্যে যার মূল অবদান তিনি হলেন পরশুরাম থানার ওসি মু. খালেদ হোসেন দাইয়ান। থানার সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরশুরাম থানা পুলিশের সেবার মানও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ এখন এখানকার পুলিশের মানবিক আচরণ ও ভূমিকায় বেশ সন্তোষ প্রকাশ করছে।
ওসি খালেদ হোসেন জানান, ‘থানার চারপাশে আরও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন ফুল গাছও লাগানো হবে।’ নিজ উদ্যোগেই এই বাগান করবেন জানিয়ে ওসি খালেদ হোসেন আরও বলেন, এসব ফুল যেমন থানার সৌন্দর্য-সেবায় বদলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন উজ্জীবিত করে, তেমনি মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদেরও। থানায় এসে ব্যতিক্রমী এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে থাকেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
জানা গেছে, থানার বড় অংশটি জুড়ে পুকুর আর তাই তাকে মনমুগদ্ধকর আর প্রাণবন্ত করে নানান রকমের লাইট রাতের জন্য এবং দিনে চারপাশে বসতে ছাতা লাগানো এবং নানান রকমের বাহারি ফুল গাছ লাগানোর সিদ্বান্ত নিয়েছেন তার মাঝে পুকুরের সৌন্ধর্য বর্ধনে লাইটিং এর কাজ প্রায় শেষ। তাছাড়া থানার সদস্যদের মন ভালো রাখতে থানার পুকুরে নৌকা রাখা হয়েছে। সকাল বেলা উপভোগ করতে (সাদা রাজ হাঁস নেওয়া হয়েছে) অন্য দিকে বাকি কাজ অল্প কয়েকদিন এ শেষ হবে জানিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ফুলের বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি। আর একটু সুযোগ পেলেই বাগানের পরিচর্যার কাজে নেমে পড়েন। সে সঙ্গে অংশ নেয় থানার কর্মরত পুলিশ সদস্যরাও। থানা চত্বরে গড়ে তোলা বাগানটি মানুষের মনে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। অনেকে সুযোগ হলেই পরিবার নিয়ে দেখতে চলে আসছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনী পরশুরাম সড়কে ঐতিয্যবাহী অতুল মজুমদারের মিষ্টি দোকান এর একটু সামনে গেলে হাতের বামে এবং ফেনী হয়ে আসলে ডানে আর তার কিছুটা ভিতরে গেলে চোখে পড়বে আধুনিক মনোমুগ্ধকর পরশুরাম থানা।
সকালে প্রকৃতি যখন কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে, তখন পরশুরাম থানার বাগানে উঁকি দেয় ডালিয়া, সেলফিয়া, জুঁই, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, জুঁই, রকমারি পাতাবাহার থেকে শুরু করে বাহারি ফুল। রীতিমতো মালি নিয়োগ করে থানার বাগানের পরিচর্যা করে পুলিশ কর্মীরা। কেবল ফুল নয়, থানার পূর্বপাশে রয়েছে ঝাউ, নারিকেল, পেয়ারা গাছ। পুকুরপাড় এ বসে যে কারও মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
থানার একজন কর্মকর্তা জানান, তারা নিজেরা বেতনের টাকা দিয়ে বাগান ও পুকুর এর পরিচর্যার জন্য মালি নিযুক্ত করে রেখেছেন।
পরশুরাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিলভা মেলকাম জানান, ‘এখানে রোজ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কত মানুষ আসে। থানার পরিবেশ সুন্দর থাকলে তাদেরও ভালো লাগবে। পরশুরাম থানা পুরোপুরি গ্রামের লাগোয়া হওয়ায় এখানে অনেক পাখিও আসে।’
জানা গেছে, বর্তমানে পরশুরাম থানার পরিবেশ যেমন সুন্দর হয়েছে, তেমনি সেবার মানও বেড়েছে। সেবাপ্রত্যাশীরা এখন সেবা নিতে গিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ঢুকলেই তাকে একটি চকোলেট ক্যান্ডি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর সেবা নিয়ে কথা বলা হয়।
কথা হয় কোলাপাড়া এলাকা থেকে আসা জাবেদ ভুঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, এখন অনেক ভালো লাগে থানায় এলে। যেমন সুন্দর পরিবেশ, তেমনি পুলিশের সুন্দর ব্যবহার।
স্থানীয়রা জানান, থানার সব অফিসারই সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী হয়ে কথা বলেন। বিনা পয়সায় সেবা দেন। আসলে পরিবেশ সুন্দর হলে মানুষের মনও সুন্দর হয়ে যায় এর জ্বলন্ত উদাহরণ পরশুরাম থানা। পরশুরাম থানার মতো সারা দেশের প্রত্যেকটি থানা হওয়া উচিত। যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ওসি খালেদ হোসেন নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সমাজটাকে মাদকমুক্ত করাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
ওসি খালেদ হোসেন জানান, থানার পরিবেশ পাল্টে দিতে জেলা পুলিশ সুপার নুরুন্নবী স্যার আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে।’
উপস্থিত পুকুরপাড় ও ফুলের বাগান দেখতে এসে জানান, ‘অসাধারণ কর্ম। থানার পাশের এমন ফুলের বাগান ও পুকুর পাড় এর সৌন্দর্য যে কারও মনকে ভালো করে দেবে। বিশেষ করে যারা আসামি হয়ে আসছে তাদের মনটা ভালো হবে। পুলিশ সদস্যরা শত ব্যস্ত থাকার পরও যে ফুলের বাগান সাজিয়েছে এতে তারা প্রশংসার দাবিদার।’