ফেনী জেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে। কাগজে-কলমে ফিটফাট থাকলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার এবং কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কর্মস্থলে হাজির হচ্ছেন। এতে করে সরকারের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এভাবে চলছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একই অবস্থা। কেন্দ্রে ডাক্তার বসার চেয়ার-টেবিলও এখন আর নেই। বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ডাক্তারের খোঁজে নিয়মিত রোগীর আনাগোনা থাকলেও মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কার্যক্রমই শুরু হয়নি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিদর্শক ফয়েজ আহমদ অফিস কক্ষের তালা খোলেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো কার্যক্রম নেই। সহকারী সার্জন ডা. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীকে ২০১৮-র ১০ মে পদায়িত করা হলেও এখন পর্যন্ত তার দেখা পাননি কেউই। দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্ডপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ছিলেন ডা. সাহাব উল্লাহ রিটু। অন্যত্র বদলি হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১ আগস্ট তদস্থলে নিযুক্ত হন সহকারী সার্জন ডা. নাজমুল হাসান রাজু। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দফতরের কাগজপত্রে তিনি কর্মরত থাকলেও কখনও তার দেখা পাননি স্থানীয়রা। ২০১৯-এর ৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার খাইযারা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. আহমেদ নুর-ই রাব্বি পদায়িত হন। কিন্তু যোগদানের পর কয়েক দিন নিয়মিত হাজির হলেও এরপর কর্মস্থলে থাকেন অনুপস্থিত।
ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. তামিম মাহমুদ। করোনাকালে মাত্র কয়েক দিন উপস্থিত হলেও বেশিরভাগ সময় থাকছেন অনুপস্থিত। ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের বালুয়া চৌমুহনী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কাগজে-কলমে সহকারী সার্জন পদে ডা. ইসতিয়াক রাকিন কর্মরত থাকলেও তিনি অনুপস্থিত। জানা গেছে, তিনি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন। লেমুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ছিলেন ডা. রাজিয়া সুলতানা। তার বদলির পর সহকারী সার্জন হিসেবে ডা. উম্মে সালমা আঁখি দায়িত্ব পান। ২০১৭-র ১৪ মে পদায়নের পর একদিনের জন্যও তিনি কর্মস্থলে যাননি বলে স্থানীয়রা জানান। পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন হিসেবে ডা. রিফাত বিন হেলাল গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দায়িত্ব পান। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার অজুহাতে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়। কাজিরবাগ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন ডা. সানজিদা মাহবুব কর্মস্থলে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন।
জেলা ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ফেনীতে নতুন যোগ দেয়ার পর কিছুদিন আগে মেডিকেল অফিসারদের ডেকে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
–
যতন মজুমদার (যুগান্তর)