সোনাগাজী প্রতিনিধি: ফেনীন সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে নার্সের অদক্ষ হাতে টেনে হিঁচড়ে এক প্রসূতির ডেলিভারি করার অভিযোগ উঠেছে। ডেলিভারির সময় গলায় আঘাত পেয়ে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার(২৫ জুলাই ) সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় নবজাতকের পিতা রাশেদ আলম অপচিকিৎসায় নবজাতক হত্যার অভিযোগ এনে নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি পরিচালক(প্রশাসন) ও ফেনী সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত শনিবার সকালে তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের প্রসব ব্যাথা শুরু হলে তিনি দ্রুত তাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া যায়। সেখানে তার স্ত্রীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মিডওয়াইফ জান্নাত আক্তার গ্রহন করে। তার স্ত্রীর প্রচন্ড প্রসব ব্যাথা দেখা দিলে দ্রুত তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।সেসময় অপরাশেন থিয়েটারে প্রবেশ করে হাসপাতালের নার্স রেখা পাল। তিনি সবাইকে বের করে দিয়ে ডেলিভারীর চেষ্টা করতে থাকে। তার স্ত্রীর প্রসব বেদনার চিৎকার শুনে তিনি বার বার নার্স রেখা পালকে কে কর্তব্যরত ডাক্তার কে ডাকার জন্য অনুরোধ করে এবং একই সাথে অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা সম্ভব না হইলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতাল অথবা চট্টগ্রাম মেডিলেক কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেন। নার্স রেখা পাল দম্ভোক্তি করে তাকে জানায় সে ২৫বছর যাবৎ এ হাসপাতালে ডেলিভারী করিতেছে, কোন সমস্যা হবে না, এখানে ডেলিভারী হবে, শুধু আমার দিকটা একটু দেখলে হবে। এভাবে তার স্ত্রী প্রসব ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। সন্তান ভূমিষ্ট না হলে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আবারও তাকে কর্তব্যরত ডাক্তার ডাকার অনুরোধ করে এবং এখানে সম্ভব না হইলে ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণের জন্য বলেন। এসময় তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে খুঁজেও কর্তব্যরত ডাক্তারের সন্ধান পায়নি। এর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যার সময় নার্স রেখা পাল তাকে জানায় তার মৃত সন্তান জন্ম হয়েছে। কেন মৃত সন্তান জন্ম হয়েছে জানতে চাইলে নার্স রেখা পাল তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কর্তব্যরত ডাক্তার ও মিডওয়াইফ ছাড়া টাকার লোভে নার্স রেখা পালের অপচিকিৎসার তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।তার স্ত্রীও তাকে জানায় নার্স রেখা পাল টেনে হিঁচড়ে ডেলিভারি করানোর সময় তাদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
অভিযোগকারী রাশেদ আলম প্রতিবেদককে বলেন,আমি মনে করি রেখা পাল ইচ্ছাকৃত অপচিকিৎসা করে আমাদের নবজাতক সন্তানকে হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও অপচিকিৎসায় বহু নবজাতককে হত্যার অভিযোগ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সে প্রতিবার পার পেয়ে যায়।
অভিযুক্ত রেখা পাল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তিনি ডেলিভারি করানোর সময় কোন অবহেলা করেননি, টেনে হিঁচড়ে ডেলিভারি করানোর অভিযোগ মিথ্যা।ডেলিভারি করানোর সময় মিডওয়াইফ ও কর্তব্যরত ডাক্তার অনুপস্থিত থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে ডেলিভারি করেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার জিন্নাত দাবী করেন ডেলিভারির সময়ে তাকে ডাকা হয়নি। তিনি জানতে পেরে লেবার রুমে গেলে নবজাতককে মৃত দেখতে পান। কি কারনে মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার উৎপল দাস বলেন, এ ঘটনায় সিনিয়র নার্স রেখা পালসহ তিন জনকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মৃত নবজাতকের পিতার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।