জহিরুল ইসলাম রাজুঃ ফেনীর ফুলগাজীতে মহুরী নদীর বেড়িবাঁধে প্রতিবছরই ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমেও টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানিতে উত্তর দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের অংশে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকশো ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়, পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। দু-মাসের ব্যবধানে মেরামত কাজ শুরু হলেও কাজ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ পাউবো প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে এসব অনিয়ম হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটির পরিবর্তে নদীর বিপরীত পাশ এবং ভাঙ্গনস্থানের পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি। জিও ব্যাগের পরিবর্তে সারের বস্তা, গরু খাদ্যর ব্যাগ ও বাঁশ দিয়ে চলছে মেরামত কাজ। এতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই পুনরায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২০ মিটার দৈঘ্য বেড়িবাঁধ মেরামত ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাসেম ট্রেডার্স। অধিক লাভের আশায় চতুর ঠিকাদার কাসেম ট্রেডার্স নিয়োগ করেন সাব ঠিকাদার। ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কাজের চুক্তি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের সাথে মাত্র ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আর এই হাত বদলের মধ্যস্থতায় হাতিয়ে নিচ্ছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, প্রতিবছর এই মহুরী নদীর বেরিবাদের বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উন্নয়নের গল্প শোনান আমাদেরকে। সরকারি বরাদ্দ থাকলেও দিনশেষে খুব নিম্নমানের কাজ করা হয়। ফলে নতুন করে একই স্থানে অথবা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আবারো ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম জানান, নদীর ভিতরে বাঁশ গাছ কেটে সংস্কার না করার কারণে স্বল্প বৃষ্টিতেই নদীর পানি অনেক উপরে উঠে যায়। এর ফলে প্রতিবছরই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ঠিকাদার বাধেঁ মাটি ব্যবহার না করে বালি দিয়ে ভরাট করছে, ভাঙ্গন স্থানের নিচ থেকে বালু তুলে উপরে বাধঁ নিমান করছে। এই বাঁধ বৃষ্টি আসলেই ভেঙে যাবে। এমন কাজের করেন সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে আমরা কয়েকশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
ঠিকাদার আবুল কাশেম জানান, এটা এখনও টেন্ডার হয়নি। তবে প্রথমিকভাবে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে। নির্বাহি প্রকৌশলী বাধঁ মেরামত করতে বলেছে, তাই কাজ করছি। কাজটি আমি সাব কন্ট্রাকে কাজ দিয়েছি স্থানীয় মেম্বারকে, সে কাজ করছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, শিডিউলে যাওয়া আছে সে অনুযায়ী কাজ করছি।
সাব ঠিকাদার স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম জানান, ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছি। আমাকে কাশেম সাহেব যে ভাবে বলেছে আমি সে ভাবে কাজ করছি। শিডিউলে অনুযায়ী হচ্ছে কিনা আমি জানিনা।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, বাধঁ মেরামতে অনিয়ম হচ্ছে আমি জানতে পেরেছি। ঠিকাদার জিও ব্যগের বিপরিতে খাদ্যে ব্যবহৃত পুরাতন প্লাষ্টিকের ব্যাগ ও মাটির পরিবর্তে বালি সহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। সঠিক তদারকির অভাবে নিম্নমানের কাজে প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোড নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, ভাঙনের স্থানে মাটি দিয়ে সংস্কার করতে হবে প্রয়োজনে ৩০ ভাগ বালু ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু বালু দিয়ে বাঁধ সংস্কার করা সম্পূর্ণ অন্যায়। ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে মাটি জিও ব্যাগ, বালুসহ সবকিছু ধরা হয়েছে। সম্প্রতি কাজে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই ব্যপারে জেলা প্রশাসকের সাথে কাথা বলেছি। কাজে অনিয়ম হচ্ছে জেনে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।