বিশেষ প্রতিনিধি : ৩০ সেপ্টেম্বর, ফেনীর ফুলগাজীতে দাদা-দাদিকে বাড়ি থেকে বের করতে গত তিন-চার মাস যাবত ঘটে যাচ্ছে আরেক বর্বরোচিত হামলা, মারধর ও নির্যাতন। আপন নাতি সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন অর্থ ও সম্পত্তি দখলে নিতে নির্যাতন হামলা ও মারধর করে দাদা-দাদি ও চাচা-চাচিকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামে আব্দুল মজিদ মজুমদার বাড়িতে।
জানা যায় , বিগত চার পাঁচ মাস যাবত নাতি পাপন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে দাদা-দাদীর ও চাচা চাচীর উপর নির্মম নির্যাতন করে যাচ্ছেন।
তার পিতার নির্দেশনা অনুযায়ী দাদা-দাদিকে ঘর থেকে বের করার জন্য করেছেন নির্মম নির্যাতন ও শারীরিক আঘাত। এসব মারধরে দাদা দাদিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। পাপনের মারধর ও নির্যাতনে বর্তমানে তার দাদী অনেকটা অচল অবস্থায় রয়েছেন, স্টক করেছেন বেশ কয়েকবার। এইসব নিয়ে দাদা-দাদী অনেকের কাছে ধর্ণা ধরলেও সমাধান হয়নি। নাতি পাপনের নির্যাতন ও মারধর থেকে বাঁচতে দাদা আবদুল মজিদ মজুমদার ফুলগাজী থানায় দুবার অভিযোগ করলেও পাইনি কোনো সমাধান।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উত্তর আনন্দপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ মজুমদারের চার ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে কোন রকম জীবনযাপন করছেন। সংসারের অভাব গোছাতে জমি বিক্রি করে বড় ছেলে মোশারফ হোসেনকে সৌদি আরব পাঠান।
পরে ছেলের টাকা ও অপর ছেলের রোজগারের টাকা দিয়ে ২০১৫ সালের ১২ ডিসিমেল জায়গার উপর থাকার জন্য ৮ রুমের বিল্ডিং নির্মাণ করেন নিজে থাকবেন এবং অন্য ছেলেরাও থাকার জন্য দ্রুত কাজ শেষ করেন। গত চার মাস আগে থেকেই বড় ছেলে শাহাব উদ্দিন সংসারে ঝামেলা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর তার ছেলে সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন তার বাবার টাকায় ঘর করা হয়েছে বলে দাবি করলে দাদা আবদুল মজিদ মজুমদার ছেলের নামে ৪০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এর কয়েকদিন পর থেকে আরো টাকা পাওয়ার অভিযোগ তুলে দাদা-দাদীকে গালমন্দ হুমকি-ধমকিতে পাপন একপর্যায়ে সবাইকে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। বিষয়টি তার বাবা শাহাবুদ্দিনকে জানালেও তিনি সবাইকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ছেলেকে নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আব্দুল মজিদের ছোট ছেলে আব্দুল কাইয়ুম বাড়িতে আসলে ভাতিজা পাপন ঘরে ঢুকতে বাধা দেয় এ সময় দাদা আবদুল মজিদ ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা করে গুরুতর আহত করে পাপন। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে।
ওই ঘটনায় আব্দুল মজিদের চাচাতো ভাই মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার এগিয়ে আসলে তাদের ওপর চড়াও হয় পাপন। পাপন ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী এনে কল্পনা আক্তারের ঘরে হামলা করার চেষ্টা চালান। তিনি বাধা দিলে তার ছেলেকে তুলে নেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিষয়টি কল্পনা আক্তার স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ভূইয়াকে জানালে তিনি নিজেই কিছু করতে পারবেন না বলে জানান এবং থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। স্থানীয় মোশারফ হোসেন জানান, পাপন মাদকাসক্ত ছেলে, এলাকায় তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। স্থানীয় চেয়ারম্যানের আত্মীয় হওয়ার এলাকার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।

এ ব্যাপারে আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল মান্নান জানান, আমার মা-বাবা দুজনেই অসুস্থ। আমি তাদের সেবা করি। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমার বড় ভাইয়ের ছেলে পাপনের নিষ্ঠুর নির্যাতনের আমার মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে রক্তাক্ত করেছে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য আমার মামা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে জানালে তিনি কোনো বিচার করেননি। তার আপন বড় বোনের জামাইকে মারধর করলো নাতি তবুও মামা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি বর্তমান আমরা ঘরছাড়া এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ভূইয়া জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। তারা আমার আত্মীয়। পাপন ছেলেটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে। আমি এসব ঘটনা কিছুদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করছি। তবে খুব শীঘ্রই সমাজের মুরুব্বিদের নিয়ে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবো, অন্যথায় প্রশাসনের সহযোগিতা নিবো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাবার টাকায় ঘর করা হয়েছে খরচের কিছু অংশ বাবদ জমি দিলেও বাকি টাকা এখনও পরিশোধ করেননি আমার দাদ এবং চাচারা। এ নিয়ে গত বেশ কয়েক মাস আমাদের পরিবারের ঝগড়া-বিবাদ চলছে।
দাদির শরীরে মারধর বা জখমের যে আঘাত আপনাদেরকে দেখিয়েছে সেটা অন্য কোথায় পড়ে গিয়ে হয়েছে। আমার দাদা-দাদীকে আমি মারধর করেছি এই অভিযোগ মিথ্যা। আমার বন্ধুবান্ধবরা এসেছিল দাদা-দাদির সাথে কথা বলেছে কিন্তু কেউই তাদের গায়ে হাত তোলেনি। আমার দাদা-দাদীকে ঘর থেকে বের হতে আমি কোনদিনই বলিনি। আমার দাদাই প্রথম আমাদেরকে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলে আমার মায়ের গায়ের উপর হাত তুলতে গিয়েছিল। তবে ঘরের সামনের আমি দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি সেটা কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

ঘরের একাধিক দরজা ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে পাপন বলেন, আমার বাবার টাকায় করা ঘর আমি ভাঙলে কারো কিছু যায় আসে না। তার দাদার সাথে ঝগড়া বিবাদে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে বন্ধু-বান্ধবসহ তাদেরকে তুলে নেয়ার হুমকির কথাও স্বীকার করেন পাপন।
এ বিষয়ে ফুলগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কুতুব উদ্দিন জানান, আব্দুল মজিদ’র আভিযোগের কপি কোর্টে পাঠানো হয়েছে। কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।