মোঃ জহিরুল ইসলাম রাজুঃ বৃষ্টি ছাড়াই ভারতীয় উজানের পানিতে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে প্রতিবারই বন্যায় প্লাবিত হয় ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকা। গত ২৫ আগস্ট বুধবার রাতে সদর ইউনিয়নের জয়পুরে সদ্য মেরামতকৃত স্থান আবারও ভেঙে সদর ইউনিয়নের জয়পুর, কিসমত ঘনিয়া মোড়া, পূর্ব ঘনিয়া মোড়া, পশ্চিম ঘনিয়া মোড়া, বৈরাগপুর, উত্তর দৌলতপুরসহ ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মূহুর্তেই তলিয়ে যায় ঘর-বাড়ি ও মাছের ঘের। এদিকে পানির খরস্রোতে নষ্ট হয়েছে সদ্য রোপনকৃত আমন ধান ও ফসলি জমি। ইতিমধ্যে নদী ও লোকালয়ে পানি কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে দেখা দিয়েছে শত রকমের দুর্ভোগ।
মহুরী নদীর পানি কমে যাওয়ায় শুক্রবার বিকাল থেকে বন্যাকবলিত এলাকার বাড়ি-ঘর থেকে বানের পানি নামতে শুরু করেছে। তবে, এখনো অধিকাংশ এলাকায় পানি আটকে আছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট ও ফসলের খেত তলিয়ে আছে পানির নিচে। এখনো দুর্ভোগ কমেনি পানিবন্দী মানুষের। রান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, চিনি ও পাউরুটি খেয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে পানি নামলেও সেসব স্থানে এখনও রয়েছে কাদা-পানির দুর্ভোগ। এদিকে ফসলি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে চাষিরা।
বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান দুর্জয় (৩২) জানান, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে আবারো আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। মাছের ঘের, ফসলি জমি সবকিছুই নষ্ট হয়েছে। পানি কমে গেলেও দুর্ভোগ অবর্ণনীয়।
সোহেল (২৬) জানান, গত দুদিন ঘরে এক কোমর পানি ছিল। তবে, গতকাল বিকালের দিকে পানি অনেকটা কমেছে। উঠোন বাড়িতে এখনো পানি রয়েছে, রান্না করার চুলা পানির নিচে তলিয়ে আছে।
গৃহিণী সুলতানা নাজনীন (৪৩) জানান, বন্যার কারণে গত দু’দিন অনেক কষ্ট করেছি। সন্তানদের নিয়ে খাটের ওপরে ছিলাম। বাইরে থেকে বিশুদ্ধ পানি আনা হচ্ছে পান করার জন্য। যখন গ্রামে বাড়িতে পানি উঠেছে তখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
মৎস্যচাষী আব্দুল জলিল জানান, প্রবাস থেকে এসে মৎস্য চাষে বিনিয়োগ করেছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম কষ্টের টাকা উপার্জন ও অর্থে সঠিক ব্যবস্থাপনা করে সুন্দর দিন যাপন করবো। চোখের সামনে মুহূর্তেই সব স্বপ্ন ভাসিয়ে নিল বন্যায়।
উপজেলা কৃষি মাসুদ রানা জানান প্রায় ১৫০ হেক্টর আমান আবাদি জমি এবং ৫ হেক্টর সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়েছিলো। তবে এখন অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সরকারি সহযোগিতা আওতায় আনা হবে।
উপজেলা মৎস্য উজ্জ্বল বণিক জানান, ২৩ হেক্টর জুড়ে ১৩৮ টি পুকুর ডুবে মাছ পানিতে ভেসে গিয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৮ লাখ টাকার মতো । ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের কোনো রকমের তালিকা হবে কিনা বা কোন সহযোগিতা আসবে কিনা এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।
ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে লোকালয় থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। ইউপি সদস্য ও গ্রামের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে পানিবন্দী অসহায়, হতদরিদ্র মানুষদের তালিকা করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, বুধবার বিকেল থেকে নদীর পানি বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, ফলে বেরিবাদের ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এখন নদীর পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানে বেরিবাদ মেরামতের সকল যখন সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে, আগামী কালকের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
অভিযোগ রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের গৃহপালিত ঠিকাদার দিয়ে কাজ করেছেন। এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, গৃহপালিত ঠিকাদার বলতে কিছু না, আমরা জরুরী কাজের জন্য যাকে পেয়েছি তাকে দিয়ে কাজটা করাচ্ছি। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন শেষ করতে বলা হয়েছে।