বিশেষ প্রতিনিধিঃ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক পরিদর্শক(তদন্ত) কামাল হোসেনের অসমাপ্ত জেরার সম্পন্ন করার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসামীদের হাজিরা করা হয়েছে।
প্রথমে ফেনী জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ মামলার ১৬ জন আসামীর মধ্যে ১৫ জনকে আদালতে হাজির করেন। ফেনীর কোর্ট পরিদর্শক গোলাম জিলানি জানান,নয় মাসের গর্ভবতী আসামী কামরুন নাহার মনিকে শারীরিরক অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ প্রথমে আদালতে হাজির করেননি। কারা কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতার বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করেন। পরে আদালতের নির্দেশে পুনরায় মনিকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে ফেনী জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে কোর্ট পরিদর্শকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
আসামী কামরুন নাহার মনির স্বামী রাশেদুল ইসলাম রাজু জানায়, সে নয় মাসের গর্ভবতী। মামলার হাজিরার জন্য প্রতিদিন তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে।সোমবার রাত থেকে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মঙ্গলবার প্রথমে আদালতে হাজির করেননি।পরে আবার তাকে আদালতে আনা হয়।
মনিকে তিন নারী পুলিশ সদস্য আদালতের নিচ তলা থেকে ধরাধরি করে তিন তলায় অবস্থিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নিয়েছেন।এসময় শারীরিক ব্যাথায় মনিকে কাঁদতে দেখা গেছে। এ অবস্থা দেখে পাশে থাকা তার স্বামীকে উচ্চস্বরে কাঁদতেও দেখা যায়।আদালতে নেওয়ার পর মনিকে আসামীর কাঠগড়ায় চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়।আদালতের কার্যক্রম চলার পুরো সময় তাকে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কখনো কাঁদতে কখনো চোখ বন্ধ রেখে ঝিমাতে দেখা গেছে।
দুপুরে আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ এজলাসে আসন গ্রহন করে বিচার কাজ শুরু করলে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা একযোগে মনির অসুস্থ্যতার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।কয়েকজন আইনজীবী বিষয়টি অমানবিক উল্লেখ করেন মনিকে চিকিৎসা দেওয়ার দাবী জানান। এসময় বিচারক সাক্ষীর জন্য আসামীর উপস্থিতি অবশ্যই প্রয়োজন জানিয়ে সাক্ষীকে জেরা করার আহ্বান জানান।
আদালতের আদেশের পর পিপি হাফেজ আহাম্মদ সাক্ষী কামাল হোসেন কে হাজির করেন।তারপর তাকে অবশিষ্ট জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল,গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, মাহফুজুল রহমান,ফরিদ উদ্দিন নয়ন। বিকালে সাক্ষীর জেরা সমাপ্ত হওয়ার পর বিচারক মামুনুর রশিদ বুধবার মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সাহ আলমের সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য করেন। আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ও সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের কথোপকথনের রেকর্ডের বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। আদালত মুলতবি করার পূর্বে বিচারক আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিটিআরসি থেকে আমাকে ফোনে নিশ্চিত করেছে বুধবার তারা কথোকপথনের রেকর্ড প্রেরণ করবে।
আসামী রুহুল আমিনের আইনজীবী কামরুল হাসান মামলার আসামীদের জবানবন্দি গ্রহনকারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন কে পুনরায় জেরা করার জন্য আবেদন করলে আদালত তাহা মঞ্জুর করে বুধবার পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহনের আদেশ দেন।
এদিকে সোমবার আদালতের আদেশের পর সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিবেদন মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আসামী মকসুদুর রহমানের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানায়, সোনাগাজী মডেল থানা থেকে যে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে তাতে তারা উল্লেখ করেছে, গত ৬ এপ্রিলের আগে ও পরের কোন ফুটেজ সংরক্ষন করা হয়নি। তাই তারা কোন সিসিটিভি ফুটেজ পাঠায়নি। তবে গত ৬ এপ্রিলের সাধারন ডায়েরীর(জিডি) কপি আদালতে পাঠিয়েছে।আদালতের আদেশের পরও সোনাগাজী পৌর কর্তৃপক্ষ ফুটেজের বিষয়ে কোন জবাব দেননি।
আইনজীবী কামরুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, গত ৬ এপ্রিল নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হওয়ার দিন সোনাগাজী মডেল থানা ও পৌরসভার সিসিটিভি ফুটেজে কোন আসামীর মাদ্রসায় আসা যাওয়ার দৃশ্য ধারন হয়নি বলে তারা সেগুলো গায়েব করেছে।আসামীদের ফাঁসানোর জন্য তারা এ কাজটি করেছে।মামলায় যুক্তিতর্কের সময় বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।