ফারজানা হোসেন ফারজু : ভর সন্ধ্যা,যে যার প্রয়োজনে ঘরে ফিরছে। গৃহকর্তা খরচ নিয়ে বাড়ি ফিরছে পরিবারের লোকজনের মুখে হাসি ফুটাবে বলে। গৃহকর্ত্রী ঘরের কাজ সেরে সেজেগুজে প্রস্তুত হচ্ছে প্রিয়মানুষটি আসবে বলে। সমাজের অতী উচুস্তরের লোকজন নিজেদের বিনোদন দেবার জন্য নাইটক্লাব বা পার্টি তে যাচ্ছে। নিম্নশ্রেণীর কথা তো নাই বললাম তারা সারা সন্ধ্যা ঝগড়া করে আবার রাতে মিশে যায় একে অপরের মাঝে। কৃষকরা সারাদিন মাঠে কাজ করে সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পরম তৃপ্তি নিয়ে ফরমালিন মুক্ত একটা ঘুম দেয়।
সবাই মানুষ জাতী। তার মাঝেও হাজার জাতী আছে।অবশ্য সব জাত মানুষেরই তৈরি।
শহরের বড়রাস্তার ধার ঘেষে বস্তিপাড়ার ভিতর দিয়ে একটি গলি চলে গেছে। খুব সরু ও চিকন গলি। সেই গলিতে বসবাস করে রুপবানের মত কিছু সংখ্যক মেয়ে ও নারী।সন্ধ্যা হলেই তাদের সাজ বেড়ে যায়। নিজেদের রঙ্গিন করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। নিজেদের শরীরকে রঙ্গিন করাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা আরেক ভিন্ন জাতের মানুষ। তবে সেই জাতের কাছে সব জাতেরই আনাগোনা।
রাজ প্রায়ই সেখানে যেত। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় তার আলাপ হয় রুপবানের সাথে। সাধারণত সেখানে কারও সাথে কারও আলাপ হয়না, আলাপ হয় শরীরে শরীরে। যা কখনো হৃদয় স্পর্শ করেনা। তবে রাজ ও রুপবানের আলাপচারিতা বাড়তে থাকে। রুপবানের সব কথা শুনে রাজ বুঝতে পারে রুপবান এই জগত থেকে মুক্তি চায়। তার এই জগতে আগমন সম্পর্কে সে রাজ কে বলে। রাজ রুপবানকে মুক্তি দিবে বলে পতিশ্রুতি দেয়। কোন এক গভীর রাতে রাজ আর রুপবান পালিয়ে বিয়ে করে। রাজ রুপবানকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকে। রাজের পরিবার পরিজনকে রুপবান দেখেনি। এক পর্যায়ে রুপবান জানতে পারে রাজ বিবাহিত। তাতে রুপবানের তেমন কোন অভিযোগ নেই। সে নিজেকে এই বলে স্বান্তনা দেয় যে আমার মত মেয়েকে বিয়ে করেছে এই অনেক।
রাজ প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় রুপবানকে বাসায় তালাবদ্ধ করে রেখে যায়। একদিন রাজ ঘরে ঢুকে দেখে রুপবান জানালার ধারে বসে আছে। রাজ রুপবানকে জানালায় বসতেও নিষেধ করে। দরজা জানালা বন্ধ একটি অন্ধকার কুঠুরিতে রুপবান দিন কাটায়। রাতে রাজ এলে সঙ্গ পায় এই যা। একদিন রুপবান বাইরে যাওয়ার জন্য বায়না করে। সে চিন্তা করে দেখে অনেকদিন সে সুর্যের আলো দেখেনা। সে রাজের কাছে বারবার বলতে থাকে সে বাইরে একটু বেড়াতে বেরুতে চায়। রাজ রাজী হয়না। এ নিয়ে রুপবান কান্না শুরু করে। একপর্যায় এ রাজ বলে ফেলে ‘অভ্যাস কখনো পরিবর্তন হয়না’ ‘বেশ্যা কখনো সুদ্রায় না’। এই বলে রাজ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে।
ঘরে ঢুকে দেখে টেবিলে সুন্দর একটি চিরকুট। এতে লিখা”আমার আর তোমার একই জায়গায় দেখা। আমি আর তুমি একই কাজই করতাম। আমি তোমার ব্যাস্ত জীবনে আনন্দ দিতাম। বিনিময়ে টাকা নিতাম। তোমার স্ত্রী গর্ভবতী থাকাতে তুমি আমার কাছে গিয়েছিলে। আর আমি ছোট বেলায় বিক্রি হয়ে কারও জিম্মায় ছিলাম বলে তোমার কাছে আমার দেহ মেলে ধরতাম। সেই নগ্ন দেহ ভোগ করেই তুমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আমার উপর লুটিয়ে পড়তে। কিন্তু আমি এবং আমরা পেটের দায়ে বেশ্যা আর তোমরা স্ত্রীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েও সাধু পুরুষ সেজে ঘুরে বেড়াও। ”
এইতো শুধু এক রুপবানের কাহিনী। হাজারও রুপবান পড়ে রয়েছে গ্রাম, শহর, পল্লীতে। তাদের কাছে উকি মারে সকল স্তরের রাজ রা। সারারাত ফুর্তি করে রাজদের মুক্তি মেললেও মুক্তি মেলেনা হাজারও রুপবানের। সারারাত ফুর্তি করা সেই ছেলেটাও রুপবানদের বেশ্যা বলে।